নতুন কোকেইন সোশ্যাল মিডিয়া, যার ডিলার স্মার্টফোন!



Gamebazz ডেস্ক: সোশ্যাল মিডিয়া বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বলতে আমরা বুঝি- ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, হোয়াটসআপ, ভাইবার, স্ন্যাপচ্যাট ইত্যাদিকে। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগুলো খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পেয়েছে, কেননা এগুলোর মাধ্যমে মানুষ একে অন্যের সাথে খুব সহজে তথ্য আদান-প্রদান বা যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়।


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আরও বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্মার্টফোনের বদৌলতে। কেননা, স্মার্টফোনের সহজলভ্যতা এই প্লাটফর্মকে আরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে মানুষ এতে সময় ব্যয় করছে অনেক বেশি।


এ কারণেই আমাদের পকেটে থাকা এই ‘স্মার্টফোনকে’ বলা হচ্ছে ডিজিটাল কোকেইন। কেননা সোশ্যাল মিডিয়া পুরোপুরি নেশা জাতীয় মাদকের মতো কাজ করে।আপনার পকেটে থাকা স্মার্টফোনটি কেন এত বিপজ্জনক? এসব নিয়ে কথা বলেছেন হ্যাবিট স্ট্রং এর প্রধান রাজন সিং।


তার মতে, প্রথমেই জানা দরকার যে, সোশ্যাল মিডিয়া তথা ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রাম কীভাবে অর্থ উপার্জন করে। অনেকেই মনে করে- ফেসবুক ফ্রি। এটি ব্যবহার করতে অর্থ পরিশোধ করতে হয় না। অবশ্যই এজন্য অর্থ দিতে হয় না। কিন্তু ২০২০ সালে সারাবিশ্বে ফেসবুকের রাজস্ব আয়ের দিকে লক্ষ্য করুন।


তিনি আরও বলেন, ফেসবুক আয় করেছে ছয় লাখ কোটি রুপির বেশি। তারা যদি এত বিশাল পরিমাণ আয় করে, সেক্ষেত্রে কিছু তো বিক্রি করতে হয়। তারা কী বিক্রি করে?


রাজন সিং বলেন, সোশ্যাল মিডিয়া আপনার সময় ও মনোযোগ বিক্রি করে। আপনি যখনই ফেসবুকে থাকেন, আপনি বিজ্ঞাপন দেখেন এবং কিছু বিজ্ঞাপনে ক্লিক করেন। তখন কী ঘটে? এতে করে ফেসবুক অর্থ আয় করে। তারা বিজ্ঞাপন দেখিয়ে আয় করে। আর আপনি যদি ২০ মিনিট সময় এখানে কাটান, তাহলে তা থেকেও সোশ্যাল মিডিয়া লাভবান হয়। কারণ, তারা আপনার সময় বিক্রি করে।


তিনি আরও বলেন, আপনি যদি ফেসবুক হন, তাহলে কিভাবে নিজের আয় বৃদ্ধি করবেন এবং আপনার করণীয় কী হবে? স্বাভাবিকভাবেই আপনি চাইবেন, মানুষ এই প্ল্যাটফর্মে আসুক এবং যথাসম্ভব বেশি সময় এখানে কাটিয়ে দিক। বাস্তবেও মানুষ বেশিরভাগ সময় ফেসবুক কিংবা ইন্সটাগ্রামে কাটিয়ে দেয়।


রাজন বলেন, মানুষ কিভাবে আবশ্যকভাবে এবং বাধ্যতামূলকভাবে এই প্ল্যাটফর্মে আসবে? এজন্য এখানে আসাটা অভ্যাসে পরিণত করতে হবে যে, তারা যেন ইন্সটাগ্রাম এবং ফেসবুক চেক করতে আসে। এটা এজন্য নয় যে, তারা এটা করতে চায় কিংবা তারা এটা চিন্তা করে সেজন্যও আসছে না। তারা আসছে বিনা চিন্তাতেই, যখনই তাদের বোরিং (বিরক্তি)  লাগে, তখনই ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম, হোয়াটঅ্যাপ কিংবা অন্য প্ল্যাটফর্মগুলোতে একটু ঢুঁ মেরে দেখে। এই অভ্যাস তৈরি করা হয় এবং সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী করেই তৈরি করা হয়, যা আসক্তির পর্যায়ে চলে যায়।


তিনি বলেন, আসক্তি কী? আসক্তির মধ্যে দুই ধরনের বৈশিষ্ট্য থাকে। যার একটি হলো- অবশ্যই কাজটি আবশ্যিকভাবে করার জন্য তাড়না তৈরি হওয়া।  আর অন্যটি হলো- যখন এই অভ্যাসের ফলে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে, সেটা জেনেও তা আর থামানো যায় না; যখন এই পার্যায়ে চলে আসে, তখন সেই অভ্যাসকে আসক্তি বলে। 


রাজন বলেন, এই আসক্তি আমাদের মস্তিষ্কে কিভাবে কাজ করে। আপনারা নিশ্চয়ই ডোপামিন এর নাম শুনেছেন। যখন কেউ কোকেন সেবন করে, তখন কী ঘটে? তখন তারা এক ধরনের প্রশান্তি অনুভব করে এবং মস্তিষ্কে ডোপামিনের পরিমাণ বেড়ে যায়। এটা ২০, ৩০, ৪০ শতাংশ বেড়ে যায়? না। এটা অনেক বেশি বেড়ে যায়। সে কারণে কোকেন অনেক বেশি পরিমাণ আসক্তি তৈরি করে। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া সেই আসক্তি তৈরি করছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আপনি একটি ছবি পোস্ট করলেন। কেউ সেই ছবি দেখল এবং তাতে লাইক দিল। এটা অনেক বড় রকমের নতুনত্ব।


উদাহরণ টেনে রাজন বলেছেন, নোটিশ বোর্ডে যখন কোনও কিছু লেখা থাকে, তখন তাতে মানুষের তেমন একটা আগ্রহ থাকে না। এমনকি সেখানে কবিতা কিংবা অন্য কিছু লেখা থাকলে খুব বেশি মানুষ দেখে না। দেখলেও তার প্রতিক্রিয়া বোঝা যায় না। কিন্তু কেউ যখন ফেসবুকে ছবি, গল্প কিংবা অন্য কিছু পোস্ট দিচ্ছে। মানুষ তাতে লাইক দিতে পারছে। যে ব্যক্তি ছবিটি পোস্ট করেছেন, তিনি তখন মানসিকভাবে দারুণ প্রশান্তি লাভ করছেন। তিনি ভাবছেন একশো মানুষ লাইক দিয়েছে, এক হাজার মানুষ লাইক দিয়েছে কিংবা ১০ হাজার মানুষ লাইক দিয়েছে তার লেখা, ছবি বা গল্পে। আর এটা দেখে অন্যরা ভাবছে, ওই ব্যক্তির পোস্টে এতো লাইক পড়েছে, এটা তো অনেক বড় কিছু। সে কারণে মানুষজন সোশ্যাল মিডিয়ায় ফলোয়ার থাকার বিষয়টাকে গুরুত্ব দিচ্ছে। যার ফলোয়ার বেশি, অন্যরাও তাকে গুরুত্বপূর্ণ ভাবছে। এখন এটা একটি খেলা হয়ে গেছে।


তিনি আরও বলেন, ফলোয়ার বাড়ানোর জন্য এবং তাদের কাছ থেকে লাইক পাওয়ার জন্য বেশি আকর্ষণীয় আধেয় তারা পোস্ট দিচ্ছে। এমন আকর্ষণীয় ছবি বা আধেয় পোস্ট করা হচ্ছে, অন্যরা যেন তাতে লাইক দেয় এবং তা শেয়ার করে। যত বেশি লাইক, কমেন্ট, শেয়ার হচ্ছে, পোস্টদাতা তত বেশি খুশিতে উত্তেজিত হচ্ছে। আপনি যখন ফেসবুকে পোস্ট দিচ্ছেন, আপনিও চান যে, অনেক বেশি মানুষ এতে লাইক দিক। এতে করে ডোপামিনের সঙ্গে ডিল হয়ে যাচ্ছে। যখন অনেক বেশি মানুষ আপনার পোস্টে লাইক দিচ্ছে, কিংবা এমন কেউ লাইক দিয়েছে, যা আপনি প্রত্যাশা করেননি; তখন খুশিতে আপনার ডোপামিন লেভেল বেড়ে যাচ্ছে।


রাজন সিং মনে করেন ডোপামিন = ডু ইট মোর বা আরও বেশি করো। যে কাজটি আপনি করেছেন, সেই কাজ আরও বেশি করার তাড়না সৃষ্টি হয়। ফলে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি তৈরি হয়ে যায়। যে কারণে সোশ্যাল মিডিয়া বর্তমানে কোকেনের মতো কাজ করছে।